কমিউনিটি ক্লিনিক প্রেক্ষাপট
নব্বইয়ের দশক থেকে বিশ্বের বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে দেখতে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে সমাজভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের সফল উদ্যোগ দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে নানাভাবে বঞ্চিত। তাই এদেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কিছুদিন পর সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজ শুরু হয়েছিল। দরিদ্র সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও নিঃসন্দেহে এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
১৯৮৬ সালে সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকান্ডের যে মুল্যায়ন হয় তাতে প্রতিয়মান হয় দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থ্য প্রথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার যে ধারায় বাস্থ্যবায়ন হহয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। পরিস্থির বিচারে সরকার ১৯৮৭ সালে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে জোরদার করার কর্মসুচি হাতে নেন। এ কর্মসুচির আওতায় তৃনমুলে স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রদানের প্রান্তসীমা অথ্যাৎ ইপিআই আউটরিচ সেন্টার ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কর্মকান্ড সমন্ময়ের মাধ্যমে গ্রামিন স্বাস্থ্য সেবা পোষ্ট (Village Health Care Post) থেকে মাসিক ভিত্তিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা, টিকাদান, শিশুর বাড়ন গতি পর্যানুসরন, ভিটামিন এ, লৌহ বটিকা বিতরন, ডাইরিয়া, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রন, খাবার স্যালাইন বিতরন, পরিবার পরিকল্পনা সেবা দান, রেফারাল, গর্ভকালিন ও প্রসবোত্তর পরিচর্যা ইত্যাদি প্রতি ওয়ার্ডে ৮ টি গ্রামিন স্বাস্থ্য সেবা পোষ্ট স্থাপন (যে কোন ব্যাক্তির বাড়িতে) একজন স্বাস্থ্য সহকারী (HA) ও একজন পরিবার কল্যান সহকারী (FWA) কতৃক গ্রামিন স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগীতায় প্রতি মাসে উপরোক্ত সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থ্য রাখা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলিগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর “২০০০ সাল নাগাত সবার জন্য স্বাস্থ্য” নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্দুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে ৬০০০ জনগনের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন।
আরো পড়ুন ঃ জনসচেতনতায় জনবান্ধব ও স্মার্ট কমিউনিটি ক্লিনিক।
দেশের জনগণকে একটি নির্দিষ্ট মানসম্মত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালের ২৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচী বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়। ১৯৯৮ সালের ১ জুলাই স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। এ কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে থেকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজের মাধ্যমে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাম/ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সরকার ১৯৯৬ সালে জনগনের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পরিরকল্পনা নেয়। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করে। নীতিমালায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তা বিধানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু ২০০১ সালে চালুর অব্যবহিত পরে সরকার পরিবর্তনের পর কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ অবস্থা ২০০৮ সাল অবধি চলে। ২০০৯ সালে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক পূনরুজ্জীতিকণের লক্ষ্যে ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ (আরসিএইচসিআইবি) শীর্ষক ৬ বছর মেয়াদী (জুলাই ২০০৯ হতে জুন ২০১৫ পর্যন্ত) প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় মেরামত, নতুন জনবল নিয়োগ ও তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ অন্তে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। প্রকল্প মেয়াদে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিও চালু করা হয়। বর্তমানে ১৩১৩৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে এবং শীঘ্রই আরও ২০০ টি চালু হবে। জুলাই/২০১১ হতে প্রকল্পের পাশাপাশি HPNSDP এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে "কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার” (সিবিএইচসি) নামে একটি অপারেশনাল প্লানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে । জুলাই, ২০১৫ হতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম সিবিএইচসি এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৫-২০২১ ওপি প্রকল্প অদ্যবদী চলে । হাজার হাজার গ্রামবাসী বিশেষতঃ দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মা ও শিশু নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণ করছেন ।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে সরকার দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাস করে।
আরো পড়ুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮
কমিউনিটি
ক্লিনিকসমূহে (নিম্নলিখিত সেবা প্রদান করা হয়) কার্যাবলী:
সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্ত:সত্ত্বা মহিলাদের প্রসব-পূর্ব ( প্রতিরোধক টিকা দানসহ), প্রসবকালীন এবং প্রসব-উত্তর ( নব-জাতকের সেবাসহ ) সেবা;
সময় মত প্রতিষেধক টিকাদানসহ ( যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস -বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি ) শিশু ও কিশোর কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা; জনগনের বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহন ও সেবা প্রদান; ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালা-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং উহাদের সীমিত চিকিৎসা সুবিধা;
সাধারন জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা/পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগ, ক্রিমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারন রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান ;
অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরন, যেমন- কনডম, পিল, ইসিপি ( জরুরী গর্ভ নিরোধক ) ইত্যাদি সার্বক্ষনিক সরবরাহ ও বিতরন নিশ্চিকরণ; ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (UHFWC) কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (FWV) নির্দিষ্ট সময় অন্তর কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে আগ্রহী মহিলাদের আইইউডি (IUD) স্থাপন এবং/অথবা ইনজেকশন প্রদান ; স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে জটিল কেইসগুলিকে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদান পূর্বক দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা;
আরো পড়ুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিকর সিটিজেন চার্টার -
ক্লিনিকে আগত সেবা গ্রহণকারীদের জন্য স্বাস্থ্য- সম্মত জীবন যাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন, সুষম খাদ্যভ্যাস, টিকার সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ, ক্রিমি প্রতিরোধ, বুকের দুধের সুফল, ডায়রিয়া প্রতিরোধ, পুষ্টি সস্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি, পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও উহার বিভিন্ন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কিত আচার-আচারন ও
দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন (BCC) বিষয়ে গ্রুপভিত্তিক পরামর্শ দানের ব্যবস্থা; ১৫-৪৯ বৎসর বয়সের সন্তান ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মায়েদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও টিকা প্রদান করা; জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে শিশুর জন্মনিবদ্ধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহায়ক সুপারভিশন করা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহন করা; মহামারী নিয়ন্ত্রনে অংশগ্রহন করা; যেকোন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা; সদ্য বিবাহিত ও অন্ত:সত্ত্বা মহিলাদের নিবন্ধিকরন ও সম্ভাব্য প্রসব-তারিখ সংরক্ষন; সদ্য প্রসবকারিনী ( ৬ সপ্তাহের মধ্যে ) এবং শিশুদের ( বিশেষতঃ মারাত্বক অপুষ্টি, দীর্ঘ মেয়াদী ডায়রিয়া বা হামে আক্রান্ত ) ভিটামিন- এ ক্যাপসুল প্রদান; প্রসবের অব্যবহিত পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শাল দুধ সহ কেবল মাতৃ-দগ্ধ খাওয়ানো পরামর্শ দেওয়া; মহিলা ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান; এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ৬ মাস পর পর প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-এ খাওয়ানো এবং রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের খুজে বের করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; আয়োডিনের স্বল্পতা, ক্রিমি, শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমন ( ARI ), যক্ষা ((DOTS সহ), কুষ্ঠ (MDT পর্যানুসরন), ম্যালেরিয়া, ত্বকের ছত্রাক ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা কিংবা উচ্চতর হাসপাতাল/ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপত্র অনুসরণে ঔষধ প্রদান ; ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদেরকে ও.আর.এস. এর সাহায্যে চিকিৎসা করা; বাড়ীতে ডায়রিয়ার চিকিৎসা প্রদান এবং খাওয়ার স্যালাইন প্রস্তুত ও ব্যবহার পদ্ধতি সম্বন্ধে শিক্ষা দান; প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন প্রাপ্তি সাপেক্ষে গর্ভনিরোধক ইনজেকশন এর ২য় এবং পরবর্তী ডোজ প্রদান; স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি (NSV, tubectomy, IUD, implant) সম্পর্কে সক্ষম দম্পতিদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং পদ্ধতি গ্রহণের জন্য উপজেলা/ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেরণ; নবজাতক ও শিশুদের বিপদজনক লক্ষণ ও অত্যাবশ্যকীয় যত্ন সম্নন্ধে মা/অভিভাবকদের সচেতন করা; বাড়ীতে গিয়ে এবং নির্দিস্ট সময় অন্তর দূরবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করা; প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন এবং ব্যবস্থাদি থাকা সাপেক্ষে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করা; যৌনতা, নিরাপদ যৌন সম্পর্ক এবং বালিকা/ মহিলাদের বিশেষ বিশেষ পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি; প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সুস্থ জীবন-যাপনে পরামর্শ (Counseling) ও সহায়তা প্রদান ; ওয়ার্ড/কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন; রজঃ নিবৃত্তি কালীন সমস্যাদির বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা এবং প্রয়োজনে রেফার করা; পুষ্টি হীনতা প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান; সংক্রামক রোগ ও ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধে স্তর অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; আপদকালীন ও জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্তর অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
কমিউনিটি ক্লিনিকের আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের দায়িত্ব-কর্তব্য:
শুক্রবার ব্যাতীত সপ্তাহে ৬ দিন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কমিউনিটি ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে প্রদেয় সেবা প্রদান করবেন; স্বাস্থ্য কর্মী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ সপ্তাহে তিনদিন করে কমিউনিটি ক্লিনিকে বসবেন । কে কোন দিন বসবেন তা স্থানীয়ভাবে ঠিক করা হবে । অফিস সময় হবে সকাল ৯:০০ থেকে বিকাল ৩:০০ ঘটিকা; কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারগণ স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের ( নতুন ৩ ওয়ার্ডের ৩ জন মাঠ কর্মী ) তদারকী করবেন; প্রশাসনিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ যে যার দায়িত্ব পালন করবেন । কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজের সুবিধার জন্য প্রতি ইউনিয়নকে ২ ভাগ করে ১ টি অংশে একীভূত সমন্বিত কার্যক্রমের (স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক সেবা প্রদান) তদারকীর দায়িত্ব সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং অন্য অংশের তদারকীর দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের উপর ন্যাস্ত হবে; মাঠকর্মীদের একীভূত/সমন্বিত কার্যপরিধি (একই মাঠ কর্মীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক সেবা প্রদান) থাকবে; বর্তমান প্রশাসনিক কর্মএলাকা (প্রতি ইউনিয়নে ৯ টি ওয়ার্ড ) ভিত্তিক মাঠকর্মীদের পদায়ন করা হবে; যদি কর্মীর সংখ্যা বেশী হয় তবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে তা সমন্বয় করে পদায়ন করা হবে; কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের অনুপস্থিতিতে স্বাস্থ্য সহকারী/পরিবার কল্যাণ সহকারী কমিউনিটি ক্লিনিকের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন; স্বাস্থ্য সহকারী/পরিবার কল্যাণ সহকারী একে অপরের অনুপস্থিতিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে সকল সেবা নিশ্চিত করবেন; বছরের প্রারম্ভে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, পরিবার কল্যাণ সহকারী, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং কমিউনিটি গ্রুপ এর সাথে আলোচনাক্রমে ১ টি বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা তৈরী করবেন । পরিকল্পনায় ক্লিনিকে প্রদেয় সেবাসমূহ সুচারুভাবে সম্পাদনের জন্য ঔষধপত্র, এমএসআর চাহিদা, সাপ্তাহিক/মাসিক সভার তারিখ, স্যাটেলাইন ক্লিনিক সংগঠনের তারিখ, ইপিআই সিডিউল ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত থাকবে; কমিউনিটি ক্লিনিকে ক্লায়েন্ট ফ্লো বৃদ্ধি করার লক্ষে স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারী বাড়ী পরিদর্শন কালীন সময়ে আন্তব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন; কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ঔষধ ও এমএসআর সহ আবশ্যক দ্রব্যাদির প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করবেন এবং ঔষধপত্র ও এমএসআর সংগ্রহের জন্য ইউনিয়ন মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবাহ পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং পরিবার কল্যাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর ইনডেন্ট প্রদান করবেন; যে সব গর্ভবতী মহিলা কমিউনিটি ক্লিনিক হতে প্রসবপূর্বক ও প্রসবোত্তর সেবা গ্রহন করেননি এবং যে সব নারী/পুরুষ ইপিআই, যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা গ্রহণ করেননি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ তাদের খুঁজে বের করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন; ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (UHFWC) কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ( FWV ) নির্দিষ্ট সময় অন্তর কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে আগ্রহী মহিলাদের আইইউডি (IUD) স্থাপন এবং/অথবা প্রথম ডোজ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রদান কালীন সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত জন্মনিরোধক ব্যবহারকারিনীকে চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান এবং প্রয়োজনে উচ্চতর পর্যায়ে প্রেরণ করবেন; পরিবার কল্যাণ সহকারী ( FWA ) ও স্বাস্থ্য সহকারী (HA) কর্তৃক দ্বিতীয় ও পরবর্তী ডোজ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রদান করবেন; কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সফল, শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ( পূর্বতন ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও এফডব্লিউসি ) রেফারেল সেন্টার হিসাবে পরিগণিত হবে; প্রতি মাসের/সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হতে মেডিকেল অফিসার/ এম.এ/সাকমো, এফডব্লিউভি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের অধীন সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করবেন;
আরো পড়ুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিকর সিএইচসিপি কি এবং কেন ? -
প্রতি ৩ মাস পর পর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কেন্দ্রে ১ টি মূল্যায়ন সভার আয়োজন করবেন । সভায় স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, এনজিও প্রতিনিধি, কমিউনিটি গ্রুপ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থেকে ক্লিনিকে প্রদত্ত সেবা অগ্রগতি ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যালোচনা করবেন; কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং স্বাস্থ্য সরকারীগণ এই দায়িত্বের অতিরিক্ত তাদের স্ব স্ব কার্যপরিধি অনুযায়ী যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন; সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক অর্পিত যে কোন দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব:
মানুষ নানা ধরনের রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হলে চেষ্টা করে ডাক্তার দেখিয়ে, ঔষধপথ্যের ব্যবস্থা করে যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের অধিকার কার নেই? গ্রামে এমন লোকের অভাব নেই যারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে যাতায়াত খরচই মেটাতে পারেন না। তারা শহরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করবেন কিভাবে? আর গ্রাম-গঞ্জে গজিয়ে উঠা প্রাইভেট হসপিটালগুলোর অবস্থা তো অনেকেরই জানা। তারা যেন রোগীর ব্যবসা করেন। এই অবস্থা থেকে মুক্তির একটি উপায় কমিউনিটি ক্লিনিক। দেশের শতকরা প্রায় ৮০% লোকই গ্রামে বাস করেন আর তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। আবার অনেকেই এত গরীব যে, তারা দরিদ্রসংজ্ঞারও বাইরে। তারা সমাজের অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ। যারা দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতেই হিমসিম খায়, তারা কী করে রোগের চিকিৎসার কথা ভাববেন? আর তাই এই অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবেই বর্তমান সরকার সারা বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেন। বর্তমানে দেশে প্রতি ছয় হাজার জন পল্লী জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে সাড়ে তের হাজার সিসি চালু রয়েছে বা চালু হতে যাচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে মোট ত্রিশ ধরনের ঔষধ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। শুধু ঔষধ সরবরাহ নয়, ক্লিনিকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, বয়:সন্ধি ও প্রজনন সম্পর্কিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। জন্ম নিয়ন্ত্রন সামগ্রী পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি গণসচেনতা সৃষ্টি করা হয়। কিভাবে সুস্থ্য থাকা যায় এসকল পরামর্শও দেয়া হয়।
খুব উপকারী পোষ্ট, ধন্যবাদ ফরহাদ ভাই, আপনি আমাদের গর্ব।
ReplyDelete