দ্বিতীয় আন্তজাতীক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস/২০১৯
2nd International Snakebite Awareness Day September
19, 2019
"‘সর্প দংশনে ওঝা নয়, হাসপাতালেই চিকিৎসা হয়"
এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গত বছরের ন্যায় এবারও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার খেড়কাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পালিত হল “ দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস/২০১৯”
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস।
সর্প দংশন কিভাবে এড়ানো যায়?
০১. বাড়ীর চার পাশ পরিস্কার রাখুন। শোয়ার ঘরের সাথে খাবার সামগ্রী যেমন ধান-চাল, হাঁস-মুরগী, কবুতর না রাখা উত্তম।
০২. খাটের উপর মশারী ব্যবহার করে ঘুমাবেন, মেঝেতে ঘুমাবেন না। রাতের বেলায় মাচায় শোয়ার ব্যাপারে ও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
০৩. ঘাসের মধ্যে কিংবা ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর খুব সাবধানে হাঁটুন ও লম্বা জুতো কিংবা বুট জুতো পড়–ন। রাতে বের হলে আলো-লাঠিসহ বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
০৪. গর্তের মধ্যেও হাত কিংবা পা দিবেন না ও স্তুপকৃত লাকড়ি অথবা খড় খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করুন।
০৫. মাছ ধরার সময় ‘চাঁই’ বা জালের মধ্যে হাত দেওয়ার আগে সাপ আছে কিনা দেখে নিন।
সাপের পরিচিতিঃ
বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে যার মধ্যে ৬ ধরনের সাপ বিষধর-
১. গোখরা বা কোবরা (Cobra), নাজা (Naja) - নাজা কাউথিয়া, নাজা নাজা
২. পদ্ম গোখরা বা রাজ গোখরা বা কিং কোবরা (Naja)- অফিওফেগাস (Ophiophagus hannah)
৩. শঙ্খিনী বা ব্যান্ডেড ক্রেইট, কেউটে- বাংগারাস (Bungarus fasciatus), কাল কেউটে বা অল কেউটে বা হানক- Common krait (B. caeruleus),কাল নাইজার, ওয়ালস্ ক্রেইট।
৪. চন্দ্রবোরা, রাসেলস ভাইপার (Russell’s viper)- ডাবুয়া রাসেলী (Daboia russelii)
৫. সবুজ সাপ, গ্রীন ¯স্নেক (Green snake), ট্রাইমেরিসুরাস (Trimeresurus)
৬. সামুদ্রিক সাপ- সী -স্নেক (Sea snake)- Enhydrina,
Hydrophis
এছাড়াও
- অন্ধকার স্থানে টর্চলাইট ব্যবহার করুন।
- মাটিতে শোয়া পরিহার করুণ।
.
.
অন্যান্য পোষ্ট: |
.
আপনাকে সর্প দংশন করলে কি করবেন?
০১. অনুগ্রহপূর্বক ভয় পাবেন না। বেশীরভাগ সাপ অবিষধর।
০২. দংশিত অঙ্গ (হাত কিংবা পা) বিশ্রামে রাখুন। পায়ে দংশন করলে বসে পড়ুন, হাঁটবেন না। হাতে দংশন করলে হাত নাড়াচাড়া করবেন না। হাড় ভাঙ্গলে যেভাবে কাঠ-ব্যান্ডেজ দিয়ে স্পিøন্ট (Splint) করে ঐভাবে ব্যবস্থা নিন।
০৩. দংশিত অঙ্গে গিঁট দিবেন না।
০৪. সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন, মটরবাইক/এ্যাম্বুলেন্স এর সাহায্য নিন।
০৫. দংশিত স্থানে কাটবেন না, সুঁই ফুটাবেন না, কিংবা কোন রকম প্রলেপ লাগাবেন না।
০৬. ওঝা বা বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা করে কিংবা ঝাড়-ফুঁক করে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
বিষাক্ত সর্পদংশনে লক্ষণ সমূহ :
১। দংশিত স্থানে একেবারে কোন প্রভাব না থাকা থেকে শুরু করে চামড়ার রং পরিবর্তন, কালচে হওয়া, ব্যাথা, দ্রুত ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া, পচন, যা দংশিত স্থান হতে ক্রমাগত রক্তপাত হতে পারে।
২। ঘুম ঘুম ভাব।
৩। অস্বাভাবিক র্দূবলতা।
৪। চোখের উপরের পাতা ভারী হওয়া বা বুজে আসা।
৫। চক্ষু গোলক নড়াচড়া করতে না পারা।
৬। চোখে ঝাপসা দেখা বা একটি জিনিসকে দুটো দেখা।
৭। জিবা জড়িয়ে আসা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
৮। ঢোক গিলতে অসুবিধা, খাওয়ার সময় নাক দিয়ে পানি চলে আসা।
৯। হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া।
১০। ঘাড় দূর্বল হয়ে যাওয়া।
১১। শ্বাস প্রশ্বাসের অসুবিধা হয়ে রোগী নীল বর্ণ হয়ে যাওয়া।
১২। কাল রং এর প্রস্রাব হওয়া।
ক) প্রাথমিক চিকিৎসা:
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ
১. সর্প দংশনের পর শরীরে যে বিষ ঢুকেছে তার প্রবাহের গতি হ্রাস করা।
২. হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুহার এবং জটিলতা রোধ করা।
৩. মারাত্মক বিষক্রিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ লাঘব করা।
৪. সর্প-দংশন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর কাজ সমূহ না করা।
সর্প দংশনের জরুরী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাঃ
০১. ভয়ের কোন কারণ নেই, সর্প দংশনের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে’ - এই মর্মে রোগীকে আশ্বস্ত করা।
০২. রক্তক্ষরণ হতে থাকলে চাপ দিয়ে ধরে রাখা।
০৩. দংশিত অংগ (হাত, পা) চেপ্টা কাঠ/বাঁশের চেলা এবং ব্যান্ডেজ/লম্বা কাপড় (৩ থেকে ৪ ইঞ্চি চওড়া) যেমন গামছা, ওড়না ইত্যাদি দ্বারা ব্যবহার করতে হবে।
০৪. দংশিত অংগ এমনভাবে বাঁধতে হইবে যেন বাঁধন অনেক বেশী শক্ত অথবা ঢিলা না হয়। বাঁধনের নিচ দিয়ে যাতে দুটি আঙ্গুল চালনা করা যায়।
০৫. রোগীকে নিথর এবং নিশ্চল হয়ে শুয়ে যেতে হবে।
০৬. দংশিত অংশ এমন ভাবে রাখুন যাতে আক্রান্ত অংগ নাড়া চাড়া না হয়।
০৭. রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেমন উপজেলা, জেলা অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে।
সর্প দংশন কিভাবে এড়ানো যায়?
১. বসত বাড়ীর শোয়ার ঘরের সাথে খাবার সামগ্রী যেমন ধান-চাল, হাঁস-মুরগী, কবুতর না রাখা উত্তম। এসব সামগ্রী ইঁদুরকে আকর্ষন করে যার খোঁজে সাপ ঢুকতে পারে।
২. ঘাসের মধ্যে কিংবা ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর আপনাকে যদি হাঁটতে হয় তাহলে খুব সাবধানে হাঁটুন ও লম্বা জুতো কিংবা বুট জুতো পড়ুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না। স্তুপকৃত লাকড়ি বা খড় সাবধানে সরান। বড় বড় পাথর বা কাঠের গুড়ি সাবধানে সরানো উচিত। যদি আপনাকে ঘাসের বা ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হয় খুব সাবধানে হাঁটুন প্রয়োজনে বুট পড়ুন।
৩. মাছ ধরার সময় ‘চাঁই’ বা জালের মধ্যে হাত দেওয়ার আগে সাপ আছে কিনা দেখে নিন।
৪. বেশীরভাগ সাপ রাতে সক্রিয় থাকে। রাতে হাঁটার সময় কিংবা প্রাকৃতিক কাজে বের হলে টর্চ লাইট ও লাঠিসহ বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৫. বাংলাদেশের বিষধর সাপ ও তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান সম্বন্ধে জানুন, যাতে আপনি তাদের এড়িয়ে যেতে পারেন।
৬. ঘুমের সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন: খাটের উপর ঘুমাবেন, মেঝেতে ঘুমাবেন না। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। রাতের বেলায় শস্য, ফলের বাগান কিংবা মাছ পাহারা দেওয়ার সময় মাটিতে কিংবা মাচায় ঘুমানোর বা শোয়ার ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৭. বাড়ীর চার পাশ পরিস্কার রাখুন। বাড়ী ও চাষ করার জমির মধ্যে দূরত্ব রাখুন।
.
.
.
.
৮. বাড়ির আঙ্গিনা ময়লা-আর্বজনা মুক্ত রাখুন:
- সাপ ছদ্মবেশী শিকারী, অর্থাৎ তারা শিকারকে লুকানোর জয়গা থেকে আক্রমন করতে চায়।
- ময়লা-আর্বজনা সাপ লুকানোর জন্য উপযুক্ত স্থান। পাতা, সার, খড়ের গাদা, লাকড়ির স্তুপ, কাটা ঘাসের স্তুপ সাপের জন্য লুকিয়ে থাকার পছন্দনীয় স্থান। কাজেই এগুলো বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে সরিয়ে নিন।
৯. বাড়ীকে সাপের সম্ভাব্য খাবার মুক্ত রাখুন। প্রজাতি ভেদে ইঁদুর, ছোট প্রানী, তেলাপোকা, ঘাস ফঁড়িং সাপের প্রিয় খাবার।
১০. সাপ বসত বাড়ীর গর্তে বা ফাটলে লুকিয়ে থাকতে পারে বিধায় এগুলো মেরামত করুন।
১১. ঘরে প্রবেশের পূর্বে লাইটের সুইচ অন করুন।
১২. বিছানা, বালিশের নিচ ও স্কুল ব্যাগ যতড়ব সহকারে দেখুন। শব্দ করুন যাতে লুকিয়ে সাপ থাকা সাপ সরে যেতে পারে। জোরে পায়ের শব্দ করে আপনার উপিস্থিতি সম্বন্ধে সাপকে সর্তক করুন। সাপ বায়বীয় শব্দের প্রতি অপেক্ষাকৃত বধির তবে ভুগর্ভস্থ কম্পনের প্রতি সংবেদনশীল।
১৩. উইয়ের ঢিবিতে, গাছের গর্তে, স্তুপকৃত গাছ-তক্তা, লাকড়ি, ঘন অগাছার মধ্যে হাত দিবেন না। কাস্তেঁ ও মুঠি দিয়ে পাকা ধান কাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। মানুষের বাসস্থানের চারপাশের্^ সাপ থাকার সম্ভাব্য জায়গা গুলো পরিস্কার রাখুন। উইয়ের ঢিবি পরিস্কার করুন, গাছের গর্ত ভরাট করুন। পতিত গাছ, লগ, জ্বালানী লাকড়ি সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
১৪. আবর্জনা এবং জান্ক নিয়মিত অপসারন করুন। বসতবাড়ী সাপ আকর্ষন করে এমন প্রানী মুক্ত রাখুন যেমন- ইঁদুর, মুগরীর বাচ্চা, গিরগিটি, ব্যাঙ।
১৫. কেবলমাত্র প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাপ নাড়াচাড়া ও লালন-পালন করা উচিৎ। সাবধান! খালি হাতে সাপ ধরবেন না, কারণ সাপ মরার ভান করতে পারে।
সাপ দেখলে আপনি কি করবেন :
১। অযথা ভয় পাবেন না।
২। নিজ গতিতে সাপটিকে চলে যেতে দিন।
৩। অনাবশ্যক সাপ মারবেন না, কারণ সাপ কীটপতঙ্গ ও ছোট ছোট প্রাণীদের নিয়ন্ত্রনে রেখে মানুষের উপকার করে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৪। সাপ স্বেচ্ছায় মানুষকে দংশন করে না। সুযোগ দিলে সাপ সরে যাবে। কেবলমাত্র আতড়বরক্ষায় কিংবা উত্যক্ত করলে সাপ মানুষকে দংশন করে; কাজেই সাপের কাছে না ঘেঁষা বাঞ্চনীয়।
সংগৃহীত-ভেনম রিসার্চ সেন্টার, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ
.
.
0 মন্তব্য(গুলি):